প্রিন্স ফিলিপের শেষকৃত্য সম্পন্ন

ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের স্বামী ডিউক অব এডিনবরা প্রিন্স ফিলিপের শেষকৃত্য উইন্ডসর ফোর্টে সম্পন্ন হয়েছে।

তিনি গত ৯ এপ্রিল উইন্ডসর ক্যাসলে মারা যান। ফোর্টের প্রাকারের ভেতরেই অবস্থিত সেন্ট জর্জেস চ্যাপেলে তাকে সমাহিত করা হয়েছে।

রাজকীয় এই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় গতকাল শনিবার (১৭ এপ্রিল) ব্রিটেনের সময় বিকেল ৩টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায়)।

ডিউক অব এডিনবরা প্রিন্স ফিলিপ

জানা গেছে, মৃত্যুর আগে প্রিন্স ফিলিপ ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন যে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আনুষ্ঠানিকতা যেন ন্যূনতম মাত্রায় রাখা হয়। তার মরদেহ সাধারণ জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শায়িত রাখা হয়নি। তবে শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানটি টিভিতে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়েছে।

ইংল্যান্ডে এখন করোনাভাইরাস মহামারিজনিত যেসব বিধিনিষেধ জারি রয়েছে, তার সাথে সঙ্গতি রেখে এই শেষকৃত্যানুষ্ঠানে মাত্র ৩০ জন অতিথি উপস্থিত ছিলেন এবং তারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখেন ও মাস্ক পরে ছিলেন।

শেষকৃত্যানুষ্ঠানে রানি এলিজাবেথ। ছবি: রয়টার্স

অতিথিদের তালিকায় ছিলেন রানি এলিজাবেথ ও ডিউক অব এডিনবরার পরিবারের সদস্যরা ও ডিউক অব এডিনবরার তিনজন জার্মান সদস্য। এছাড়া এতে যোগ দেবার জন্য ডিউকের নাতি প্রিন্স হ্যারি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ব্রিটেনে আসেন। তবে তার স্ত্রী মেগান সন্তানসম্ভবা থাকার কারণে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসেননি।

শেষকৃত্যের শুরুতে ডিউকের মরদেহ উইন্ডসর দুর্গের প্রাইভেট গির্জা থেকে দুর্গের রাষ্ট্রীয় প্রবেশপথে নিয়ে আসা হয়। এরপর তার মরদেহ একটি জলপাই রঙের ল্যান্ড রোভারে করে উইন্ডসর দুর্গের ভেতরেই সেন্ট জর্জেস চ্যাপেল নামের গির্জায় নিয়ে যাওয়া হয়।

এর পেছনে ছিলেন রানি ও ডিউকের চার সন্তান প্রিন্স চার্লস, অ্যান্ড্রু, এডওয়ার্ড ও প্রিন্সেস অ্যান। আরো ছিলেন ডিউকের দুই নাতি প্রিন্স উইলিয়াম ও হ্যারি। সাথে ছিলেন পরিবারের অন্য কিছু সদস্য ও ডিউকের কর্মচারীরা।

ছবি: রয়টার্স

উইন্ডসর দুর্গের ভেতরের ঘাসে আচ্ছাদিত চতুষ্কোণ জায়গাটিতে ডিউকের মরদেহ শববাহী গাড়িতে ওঠানো হয়। সেখানে এর আগে থেকেই সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো ছিল হাউজহোল্ড ক্যাভালরি, ফুট গার্ড ও ডিউকের সাথে বিশেষ যোগাযোগ ছিল এমন সেনা ইউনিটের ছোট কয়েকটি দল।

বিকেল পৌনে ৩টায় মূল শোভাযাত্রাটি শুরু হয়। এর শুরুতে ছিল গ্রেনাডিয়ার গার্ড নামে সামরিক বাদকদল। রানি এলিজাবেথ স্বয়ং রাজকীয় বেন্টলি গাড়িতে করে শোভাযাত্রার পেছনে ছিলেন। এসময় দুর্গের ভেতর তোপধ্বনি ও গির্জার ঘন্টাধনি করা হয়।

ডিউকের মরদেহ তার মর্যাদাসূচক নিজস্ব পতাকা দিয়ে ঢাকা ছিল- তার ওপর ছিল পুষ্পস্তবক ও ডিউকের নৌবাহিনীর টুপি ও তরবারি।

সেন্ট জর্জেস চ্যাপেলে শোভাযাত্রার সাথে মিলিত হন আর্চবিশপ অব ক্যান্টারবারি- যিনি এ্যাংলিকান চার্চের প্রধান।

মূল অনুষ্ঠানে ডিউকের স্মরণে পুরো ব্রিটেন জুড়ে এক মিনিটের নিরবতা পালন করা হয়, যা শুরু ও শেষ হয় তোপধ্বনির মধ্যে দিয়ে।

ছবি: রয়টার্স

এরপর গির্জার ভেতরে কফিন নিয়ে যাওয়া হয় ও তা একটি মঞ্চের ওপর রাখা হয়। চারজন সঙ্গীতশিল্পীর একটি দল ডিউকের পছন্দের কয়েকটি গান পরিবেশন করেন। এরপর গির্জার আনুষ্ঠানিকতা বা সার্ভিস শেষ হলে ডিউককে সেন্ট জর্জেস চ্যাপেলের রাজকীয় ভল্টে সমাহিত করা হয়।

করোনাভাইরাস সংক্রান্ত স্বাস্থ্যগত বিধিনিষেধের কারণে ব্রিটেনের জনগণকে এই শেষকৃত্যের কোন অনুষ্ঠানে যোগ না দিতে বলা হয়।

অনুরোধ করা হয়, তারা যেন রাজপ্রাসাদের সামনে ফুল ইত্যাদি না দিয়ে বরং ডিউক যেসব দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলেন সেগুলোতে অর্থ দান করেন। তাছাড়া একটি অনলাইন শোকবই খোলা হয় যাতে জনসাধারণ তাদের ব্যক্তিগত বার্তা দিয়ে শোক ও শ্রদ্ধা জানাতে পারেন।

এই শেষকৃত্যানুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে ব্রিটেনে জাতীয় শোক পালন শেষ হলো। তবে রাজপরিবার আরো এক সপ্তাহ ধরে শোক পালন করবে, এবং তাদের বিভিন্ন অুনুষ্ঠানে যোগ দেবার সময় তারা কালো পোশাক পরবেন। -বিবিসি

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //